
তুমি নীল জল দেখতে চেয়েছিলে, সেদিন আমিও রাজি হয়েছিলাম তোমার পাশে দাঁড়িয়ে একটা আকাশ দেখবো বলে। তুমি রেডি হতে যখন দেরি করছিলে আমার খুব রাগ হচ্ছিলো,ভাবছিলাম আসলে মেয়েদের নিয়ে কোথাও যাওয়াটা কতটা বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতে পারে। ততক্ষনাত তোমার কক্ষের দরজাটি খোলার শব্দ আমার কানে লাগলো আমি কিছুটা খুশি যে অন্তত এখন রওনা হতে পারবো কিন্তু আর চোখে তোমার দিকে তাকাতেই পৃথিবীর সমগ্র রাগ ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়ে গেলো, আমার বুঝতে বাকী রইল না যে আজ দিনটাই হতে যাচ্ছে আমার জীবনে সেরা প্রাপ্তি। যতটুকু মনে করতে পারছি আমি প্রায় ১ মিনিট অবিচল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম তোমার চোখ আর শাড়ীটার দিকে। তুমি চুলগুলোকে এমনভাবে রেখেছিলে যা কোনো ফ্যাশন নয় একটা স্টাইল হয়ে গিয়েছিল যে ষ্টাইলের উদ্ভাবক একমাত্র তুমিই, চোখজোড়াকে এমনভাবে কাজলান্বিত করেছিলে আমি চাইলে ঘড়ির কাটায় একটা রাউন্ড হয়ে যেতো তারপরও আমার চক্ষু তৃপ্তি আসতো না। তোমার শাড়ী পড়ার ধরন আকৃষ্ট করতো যেকোনো পাশ্চাত্যরীতি অনুসৃত পুরুষকেও যে কিনা শাড়ী পরাকে সমাজের একটি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু ভাবেনা। রাতের ঝলমলে আকাশের একটা ছোট্ট চাঁদ যেমন লক্ষ কোটি কিঃমিঃ দূর থেকেও সমগ্র পৃথিবীকে আলোকিত করে তেমন কাজটাই করেছিল তোমার কপালের লাল টিপটা, তবে সেটা কোনো পার্থিবতাকে আলোকিত করেনি আলোকিত করেছিল আমার মনের পৃথিবীকে যার আয়তন মাপাটা নিতান্তপক্ষে বোকামি। আমি তোমার হাত ধরে রেখেছিলাম সমগ্র রাস্তায়, আমরা যাচ্ছিলাম রমনা লেক এ, মতিঝিল গিয়ে নামি গাড়ি থেকে তখনো আমার হাতটা খুব সচেতনভাবেই ধরে রেখেছিলো তোমার হাত, মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গ সুখ স্পর্শ করছিল আমায়। আমরা একসাথে পার্ক এ ডুকলাম একটু হাটতেই লেক,অনেক মানুষ কেউ এসেছে সময় কাটাতে,কেউ এসেছে প্রিয়জন কে এই ব্যস্ততম নগরীর মাঝে একটু শীতল ভালোবাসার ছোঁয়া দিতে,কেউ এসেছে ব্যস্ততম রুটিনবাঁধা জীবনটাকে একটু স্বস্তি দিতে………
আমরা যখন রমনাপার্ক এ প্রবেশ করি তখন ভোরের সূর্যটা পূর্ব গগনে উকি দিচ্ছে মাত্র, যদিও সেটা অপরিপক্ব ছিলো কিন্তু এর আলো মানুষকে নতুন করে বাচতে শেখাবে নিশ্চিত, হয়ত এই আলোটুকুই ভুলীয়ে দিতে পারে কারো প্রিয়জন কর্তৃক প্রাপ্ত এক টুকরো অভিমান। এই অপরিপক্ব আভাটাই তার ভালোবাসাটকুকে প্রজ্বলিত করবে। আমরা লেকের ঠিক পূর্ব দিকের একটা রেন্ট্রি গাছের নিচেই বসলাম। তুমি ব্যস্ত ছিলে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করাতে। তুমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলে একজোড়া লাল পদ্ম, যেন খুব আপন কারো জীবনাবসানও এই অপলকতায় ছেদ ঘটাতে অক্ষম। তোমার নয়ন যুগল যখন লেকের নীল রঙের রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত আমার দৃষ্টি তখন তোমার নিষ্পাপ দুটি চোখে,কি যে নিষ্পাপতার ছোঁয়া আর মুগ্ধতা সেই চোখজোড়ায় তা আমার এই ক্ষুদ্র লেখনীতে প্রকাশ অসম্ভব। আশেপাশে কিছু পাখি স্বরুপে খেলছিল,কেউ বা রোদ পোহাতে পাখা মেলে বসে আছে কেউ বা সঙ্গী পাখিটির সাথে খুনসুটিতে ব্যস্ত। ঐ মুহুর্তে তোমার দিকে তাকিয়ে বারবার আমি হারিয়েছি নিজের অস্তিত্বকে,হারিয়েছি স্বভালোবাসার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে। তোমার খোঁপাটা ছিল হিমালয়ের পেছন ফিরে ডাকা সৌন্দর্য শোভিত, যে কোনো বিলাসী পুরুষ দেখলেই কোমলতম সেই মুখখানা দেখার আখাঙ্কা চেপে রাখতে পারবেনা। আমিই সেই ভাগ্যবান পুরুষ যে কিনা এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের একমাত্র অধিকারপ্রাপ্ত ছিলাম। তোমার খোঁপায় একটা শিউলি মালা ছিল যার ঘ্রাণ মুগ্ধ করবে নেশাখোর কোনো পাখিকেও। তোমার শাড়ির ভাজ আমার লজ্জাকে আড়াল করে দিচ্ছিলো,তোমার লিপষ্টিক মাখা ঠোট আমাকে মুহুর্তের মধ্যে বাস্তবতা ভুলিয়ে দিতো। বিকাল হতেই আমরা বাসায় আসার জন্য রওনা দিতে চাইলাম কিন্তু পরক্ষনেই শুরু হল বৃষ্টি তোমার সৌন্দর্য আর বৃষ্টিমাখা প্রকৃতি মিলে সেদিন এক অচেনা স্বর্গের সাক্ষাত পেলাম,অত:পর বৃষ্টিতে ভিজে রিক্সার ফুট তোলে একরাশ সুখস্মৃতি নিয়ে ঘরে ফেরা।